রাজধানীর নটরডেম কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ইমানী হোসেন অন্তরকে (১৮) চাপাতি দিয়ে গুরুতর জখম করার পরই উঠে আসছে সাগর মিয়ার অপকর্মের ফিরিস্তি।
বয়স ১৬ কিংবা ১৭। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের এ কিশোরই এক আতঙ্ক। একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে সে। তার সঙ্গে বিরোধ বাঁধলেই হাত-পা কেটে রক্ত ঝরাচ্ছে। বেপরোয়া এই কিশোর নিজের কর্মকাণ্ডের কারণে ‘স্টেপ সাগর’ নামেও পরিচিত হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ সে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার বর্তমান মেয়র মো. মহসীন মিয়া মধুর ভাতিজা ইমানী হোসেন অন্তরকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার বাম হাতের সব রগ কেটেছে। অন্তর এখন ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। এ ঘটনার পর থেকেই সে সর্বমহলে আলোচনায় আসে।
এর আগেও এমন অনেক ঘটনাই ঘটিয়েছে সাগর। সাগর মিয়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রহিমের ভাতিজার ছেলে। এই কিশোর সন্ত্রাসী সাগর শহরের ৪-৫টি ছেলেকে বিভিন্ন সময়ে হাত, পা, হাঁটু কুপিয়েছে। এদের কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করে বেঁচে আছে। এসব ঘটনার কোনোটি আদালতে বিচারাধীন আবার কোনোটি আপস মীমাংসায় সমাধান হয়েছে।
গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় পৌর শহরের কলেজ সড়কের তৃষান হেয়ার ফ্যাশন সেলুনের সামনে চাপাতি দিয়ে কোপায় নটর ডেম কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া মেধাবী ছাত্র অন্তরকে। তাকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, অন্তরের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। কথা বলতে পারছে না। তার পিতা আতিকুর রহমান জরিপ জানান, সোমবার পর্যন্ত তার ছেলের ৪টি অপারেশন হয়েছে। বাম হাতের তার সব রগ কেটে গেছে। এখনো সেন্স আসেনি। ছেলের সুস্থতার জন্য সকলের দোয়া চান।
এ হামলার ঘটনায় আহত ইমানী হোসেন অন্তরের বড় ভাই মোশারফ হোসেন রাজ ঘটনার রাতে শহরের সাগর মিয়া, শহরতলির বিরাইমপুর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদের ছেলে ইমন মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫-৬ জনকে আসামি করে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি মামলা করেন। এর পর থেকে তারা পলাতক আছে। সাগর মিয়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রহিমের ভাতিজার ছেলে।
মোশাররফ হোসেন রাজ থানায় দেয়া লিখিত এজাহারে উল্লেখ করেন, পূর্ব হতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাগরের সঙ্গে তার ভাইয়ের মনোমালিন্য ছিল। সাগর এলাকার উচ্ছৃঙ্খল, বখাটে ও সন্ত্রাসীপ্রকৃতির ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, এই তৃষান হেয়ার ফ্যাশন সেলুন ও রেবতী টি স্টলের সামনে বখাটে ছেলেরা সকাল-সন্ধ্যা আড্ডা জমায় ও স্কুল-কলেজে ছুটি হলে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসা-যাওয়ার পথে ছাত্রীদের বিরক্ত করে। এবিষয়ে ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না। তারা জানান, উঠতি বয়সের সন্ত্রাসী হিসেবে সাগর একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে। সে কারণে তাকে সবাই এক নামে স্টেপ সাগর বলে চেনে। দিন দিন সে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
পুলিশ জানায়, ২০১৭ সালে ১১ই নভেম্বর একই স্থানে রেবতী স্টলের সামনে সন্ধ্যা ৬টায় কলেজ সড়কের বাসিন্দা সৈয়দ মুর্শেদ সালেহীন নাবিল (২৬) রিকশাযোগে বাসায় ফেরার পথে সাগর তার গতিরোধ করে রামদা দিয়ে কোপ মেরে প্রাণে হত্যা করতে চাইলে তার বাম পা ও হাতের কবজির তালু কেটে ফেলে রক্তাক্ত জখম করে। সে এখনও পঙ্গুত্ব জীবনযাপন করছে। ওই মামলটি বর্তমানে বিচারাধীন। এ ঘটনার কিছুদিন পর পৌর কমিশনার আলকাছ মিয়ার ছেলে বদরুজ্জমান নাইমকে কোর্ট সড়কে আটকিয়ে সাগর একই কায়দায় মারধর করে। একপর্যায়ে তার হাতে থাকা দা দিয়ে কোপ দিলে ওই কোপ মাটিতে পড়ে সে প্রাণে রক্ষা পায়।
জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, ঘটনার পরপরই সন্ত্রাসীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। মামলা নিয়েছি। তাদের ধরতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আশা করছি তারা শিগগিরই ধরা পড়বে।
ওসি বলেন, শুনেছি, আমি আসার আগে, সাগর ছেলেটি নাকি এর আগেও এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে। মেধাবী ছাত্র সাগরের ঘটনায় তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।